প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ কারণে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে তথ্য কীভাবে লিখতে হয় তা অনেকেই খুঁজছেন।
আপনাদের জন্য আজকের পোষ্টে আমি চেষ্টা করবো ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে লেখা সংক্রান্ত সকল বিষয় চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করার। ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য উপলক্ষে অনেকেরই বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে যেখানে তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ বা বক্তৃতা লিখতে বা দিতে হয়।
তাই ঈদে মিলাদুন্নবীর সমন্বিত ধারণা থাকা জরুরি। ঈদে মীলাদ-উন-নবী একটি ঐতিহাসিক দিন যা মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুকে চিহ্নিত করে।
এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখতে হয় এবং ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। তাই, এখনই পুরো পোস্টটি পড়ুন।
আরও পড়ুন…………………….
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস – মিলাদুন্নবী কখন শুরু হয়?
12 রবিউল আউয়াল 2023 কবে পালিত হবে
মাহে রবিউল আউয়ালের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য | কত তারিখ
স্ট্যাটাস | 12 রবিউল আউয়াল 2023 | + কবিতা
Table of Contents
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে ধারণা
ঈদে মিলাদুন্নবী আমাদের শেষ নবী রাহমাতুল্লাহ আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন উপলক্ষে একটি আনন্দ উৎসব। ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য হিজরির ১২ই রবিউল আউয়াল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ঈদে মিলাদ-উন্নবী। আজ আমাদের প্রিয় নবীর জন্মদিন।
আর এই ১২ই রবিউল আউয়ালে মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন। অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে হয়েছিল। তাই ঈদে মিলাদুন্নবীর এই দিনটি ইসলামের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ইসলামের অন্যান্য সকল ঐতিহাসিক ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়।
দ্বাদশ রবিউল আউয়াল দিবসের পবিত্রতা এতটাই মহান যে স্বয়ং নবী (সা.) এই দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এই দিনে রোজা রাখলে মহান আল্লাহ বান্দার উপর অসংখ্য নিয়ামত দান করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য তাই এই দিনে আমরা রোজা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি নামাজ আদায় করার চেষ্টা করব।
এই পোস্টের পরবর্তী অংশ থেকে, আপনি ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এক নজরে জানতে পারবেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী প্রবন্ধ
ইসলামের ইতিহাসে ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, সে কারণেই ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আমাদের দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।
তবে ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে অনেক আলেম ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কারণ ইসলাম বাড়াবাড়ির ধর্ম নয়, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু ঈদে মিলাদুন্নবীর সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখতে হলে বিভিন্ন তথ্য জানতে হবে।
সাহাবাদের যুগে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মিলাদুন্নবী নামে কোনো অনুষ্ঠান পালিত হয়নি। ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য প্রচলন শুরু হয় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর। রাসুল (সাঃ) সোমবারে রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকেও এই দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিতেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “এই দিনে আমি নবুওয়াত পেয়েছি এবং এই দিনেই আমাকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে” (সহীহ মুসলিম: হাদিস নং-1162)।
তাই তিনি নিজেই রাসূল (সা.)-এর জন্মদিনের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবীতে মিলাদ-কিয়ামের আয়োজনের প্রবণতা রয়েছে। ৬০৪ হিজরীতে আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দিন কুফুরী ইরাকের মুসিল শহরে প্রথম মিলাদ প্রবর্তন করেন। তারপর সেখান থেকে তা বিস্তৃত হয়ে আজকের ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য উৎসবে পরিণত হয়।
আজ যেভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী এবং ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কারণ কোরান হাদিসে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিশেষ উল্লেখ নেই।
ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। ঈদে মিলাদুন্নবীতে প্রত্যেকের জন্য সর্বোত্তম আমল হল, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার নফল রোজা রাখা। রাসুল (সাঃ) তার জীবদ্দশায় কখনো জন্মদিন পালন করেননি।
সাহাবায়ে কেরাম ও ইমামগণও নবীর জন্মদিন পালনের ব্যাপারে কিছু বলেননি। তাই আমাদের উচিৎ মিলাদুন্নবী নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে সঠিকভাবে নামাজ ও রোজা পালন করে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা।
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন
নবীর যুগে মিলাদুন্নবী পালিত না হলেও আমাদের দেশে অনেকেই গর্বের সাথে নবীর জন্মদিন পালন করে। ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনি ইতিমধ্যে পোস্টের আগের অংশে জেনেছেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের মতো ঘটনা এই পৃথিবীতে আর কখনো ঘটবে না। তাই আমাদের উচিত এই দিনটির গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝা।
প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য, গজল, কিরাত, আযান ইত্যাদি প্রতিযোগিতা আমাদের দেশের মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মিলাদুন্নবী নিয়ে প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঈদে মিলাদুন্নবীর এসব আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।
কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাস্তায় বর্ণিল আলোকসজ্জা, নারী-পুরুষের একসঙ্গে মিছিল, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি কোনোভাবেই ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই এসব অনুষ্ঠান না করাই ভালো।
রাসুল (সাঃ) তার বিদায় হজ্জে বলেছিলেন যে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর জীবনধারা অনুসরণ করা উচিত, তাহলে আমরা কখনই পথভ্রষ্ট হব না। অতএব, আমরা এমন সমস্ত ইভেন্ট বাদ দেব যা সেলে ছিল না
ঈদে মীলাদ-উন-নবী সহ নবীর যুগে ব্রেটেড। দ্বাদশ রবিউল আউয়ালের ঐতিহাসিক তাৎপর্য যথাসম্ভব ইসলামী পন্থায় তুলে ধরার চেষ্টা করব। পোস্টের আগের অংশ থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে লেখার বিষয়গুলো আবার পড়তে পারেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী
১৯৭৪ সালে আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়ার উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিছিল বের করা হয়। আশকে রাসু ঈদে মিলাদুন্নবীর আয়োজন করলে তা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে অবশ্যই সাহাবায়ে কেরাম তা যথাযথভাবে পালন করতেন।
কিন্তু কুরআন-হাদীসের কোনো দলিল দ্বারা তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের কোনো প্রমাণ নেই। ইসলামের মতে, নামাজ হল সর্বোত্তম ইবাদত। তাই যেকোনো বিশেষ দিনে নফল নামাজ সর্বোত্তম আমল হতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ আমাদের জন্য উদযাপনের দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন, যথা: ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতর” (আবু দাউদ – 1136)।
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, ইসলামে দুটি ঈদ ছাড়া অন্য কোনো ঈদ নেই। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা জায়েয নয়। তাই নবীজীর দেখানো জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা সকল মুমিনের কর্তব্য। আশা করি ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে প্রবন্ধ লেখার মতো যথেষ্ট তথ্য পেয়েছেন।
আমাদের দেশে অনেক আলেম কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে ঈদে মিলাদুন্নবীকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেন আমরা একে উৎসবের উপলক্ষ মনে করি। কিন্তু এ সবই নতুনত্ব।
ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর।” (সূরা বাকারা – 231)। তাই আমরা সর্বদা ইসলামী আচার-অনুষ্ঠানগুলো শুধু কুরআন ও হাদিস দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পালন করব।
শেষ বার্তা | ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনি যদি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই ঈদে মিলাদুন্নবী বক্তব্য গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝতে পেরেছেন।
এর পাশাপাশি তিনি কুরআন-হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে প্রবন্ধ লেখার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য জেনেছেন। আপনি চাইলে আপনার বন্ধুদের জানাতে পারেন ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে প্রবন্ধ লেখার কথা। ফলে তারাও এই পোস্টটি পড়ে অনেক উপকৃত হতে পারেন।
তাই তাদের মধ্যে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। ইসলামের কোনো আচার-অনুষ্ঠান পালন করার আগে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সেই সমস্ত অনুষ্ঠান নবী ও রাসূলের যুগে পালিত হয়েছে কিনা।
তা না হলে আমরা বিদআতে পড়ে যেতে পারি। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। হাক্কানী আলেমদের পরামর্শ নিতে হবে এবং আমল করতে হবে। পরিশেষে, প্রতিদিন নতুন নতুন এবং আরো ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
Leave a Reply